ঢাকা , শনিবার, ১৯ জুলাই ২০২৫ , ৪ শ্রাবণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

তাপসের ডান হাত শত শত কোটি টাকার দুর্নীতি করেও বহাল তবিয়তে ডিএসসিসির প্রকৌশলী সাবেক ছাত্রলীগ নেতা খাইরুল বাকের

নিজস্ব প্রতিবেদক
আপডেট সময় : ২০২৫-০৭-১৯ ১৪:০৯:৫৯
তাপসের ডান হাত শত শত কোটি টাকার দুর্নীতি করেও বহাল তবিয়তে ডিএসসিসির প্রকৌশলী সাবেক ছাত্রলীগ নেতা খাইরুল বাকের তাপসের ডান হাত শত শত কোটি টাকার দুর্নীতি করেও বহাল তবিয়তে ডিএসসিসির প্রকৌশলী সাবেক ছাত্রলীগ নেতা খাইরুল বাকের

 

 

নিজস্ব প্রতিবেদক

স্বৈরাচার আ.লীগ সরকারের পতনের পর সরকারের মন্ত্রী-এমপিরা সবাই গা ঢাকা দিলেও সম্পূর্ণ ধরা ছোয়ার বাইরে দুর্নীতিতে অপ্রতিরোধ্য ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের (ডিএসসিসি) তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী সাবেক মেয়র তাপসের ডান হাত হিসেবে পরিচিত আওয়ামী দোসর খাইরুল বাকের। মেয়র তাপসের সময় একাধিক কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বরখাস্ত ও বিভিন্ন শাস্তি মূলক পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য মেয়র তাপসের কাছে সুপারিশ করতেন।

 

২০২৪ সালের গনভ্যুথানে ছাত্র জনতার যৌক্তিক আন্দোলন চলাকালে আন্দোলনের বিপক্ষে একাধিক পোস্ট ও কমেন্ট ও অর্থের যোগান দিয়ে ফ্যাসিস্ট সরকারকে টিকিয়ে রাখতে ছাত্র আন্দোলনকে প্রতিহত করতে চেষ্টার কোন কমতি রাখেনি ডিএসসিসি তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী খাইরুল বাকের।

 

অভিযোগ আছে ৫ ই আগস্ট এর পরে দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের কথিত বিএনপি পন্থী দুজন নেতাকে আনুমানিক ৩০/৪০ লক্ষ টাকা ঘুষ দিয়ে পুনরায় স্বপদে বসেন এবং হয়ে ওঠেন আগের থেকেও শক্তিশালী, দেশের শীর্ষ বেশ কিছু গণমাধ্যমে একাধিক সংবাদ প্রকাশিত হওয়ার পরও বহাল তবিয়তে খাইরুল বাকের।

 

জানা যায়, অত্যন্ত দরিদ্র পরিবারের ছেলে খাইরুল বাকেরের বাবা মিন্নত আলী ছিলেন নৌকার মাঝি, তিনি খেয়া পারাপার সহ কুলির কাজও করেছেন। দিন এনে দিন খাওয়া এই খাইরুল বাকের ২০০১ সালে সহকারী ইঞ্জিনিয়ার ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন হিসাবে যোগদান করার পর থেকে আলাদিনের চেরাগ হাতে পায়। তার পর থেকেই অস্বাভাবিক হারে বৃদ্ধি হতে থাকে তার স্ত্রী ও পাঁচ ভাইদের সম্পত্তি ।

 

দুর্নীতিবাজ প্রকৌশলী খাইরুল বাকের ৫% কমিশনের বিনিময়ে বিভিন্ন প্রকল্পের অনুমোদন দিতেন।

 

অনুসন্ধানে জানা যায়, খাইরুল বাকেরের নামে বেনামে রয়েছে অত্যন্ত ৬০০ শত কোটি টাকার অবৈধ সম্পত্তি। স্থানীয় এলাকাবাসীর দাবি খাইরুল বাকের আনুমানিক ১৫০০ শত কোটি টাকার মালিক। নিকট আত্মীয় সিন্ডিকেট করে ৫ ভাই, ২ ছেলে ও স্ত্রী, জেবুন নাহারের নামে ঢাকা এবং নরসিংদী-সহ রয়েছে অন্তত ১৩ টা বাড়ী ও ৬০০ শত কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ।

 

জানা যায়, ফ্যাসিস্ট সরকারের আমলে খাইরুল বাকের ছিলেন, নরসিংদী বেলাবো- মনোহরদী উপজেলার আওয়ামী লীগের ডোনার। স্বৈরাচার সরকারের সাবেক শিল্পমন্ত্রী অ্যাডভোকেট নুরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূনের সাথে ছিলো তার ঘনিষ্ঠতা। সাবেক এই মন্ত্রীর নির্বাচনী প্রচারণায় খাইরুল বাকের অবৈধভাবে কোটি কোটি টাকা দিয়ে সহযোগিতা করারও অভিযোগ উঠে। খাইরুল বাকের বেলাবো ও মনোহরদী উপজেলার আওয়ামী লীগের অর্থ দাতা হিসেবেও বেশ পরিচিত।

 

ছাত্র জীবনে খাইরুল বাকের চুয়েট (চট্রগ্রাম প্রকৌশলী বিশ্ববিদ্যালয়) শহীদ তারেক হুদা হল শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক এবং পরবর্তীতে (চট্টগ্রাম প্রকৌশলী বিশ্ববিদ্যালয়ের) কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সহ-সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন।

 

গত ২৬ ই জুন ২০২২ সালে একটি জাতীয় দৈনিকে “দূর্নীতির টাকায় অঢেল সম্পদ তার, এলাকায় দানশীল!” শিরোনামে খাইরুল বাকেরের অপকর্মের তথ্য নিয়ে একটি সংবাদ প্রকাশ করে। পরবর্তীতে সেই প্রকাশিত সংবাদের প্রতিবাদ দিয়ে সেখানে নিজেকে ছাত্রলীগ দাবি করে খাইরুল বাকের।

 

অনুসন্ধানে আরও জানা যায়, ঢাকার কামরাঙ্গীরচরে তার তিন ভাইয়ের নামে রয়েছে ৪ টা বাড়ী। বড় ভাই আলাউদ্দিনের নামে ২ টা, ছোট ভাই হোসেন আলীর নামে ১ টা ও বড় ভাই রাশেদ মিয়ার নামে ১ টা।

 

খাইরুল বাকেরের নিজ নামে খিলগাঁও তালতলায় অতশী লাবনী বিল্ডিংয়ে রয়েছে কোটি টাকা মূল্যের ১ টি ফ্লাট।

 

তার স্ত্রী জেবুন নাহার, সোনালী ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে কমন সার্ভিস ডিভিশনে এজিএম হিসেবে কর্মরত ও খাইরুল বাকেরের নিজ নামে বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় আই ব্লকে ৩৬ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত ছয় তলা ভবনের ৪ তলায় ৬ কোটি টাকা মূল্যে ক্রয় করা ২ টা ইউনিট।

 

স্ত্রী জেবুন নাহারের নামে সিপাহী বাগ খিলগাঁওয়ে ১ বাড়ী, পূর্বাচল সেক্টর:১০, ৪০৭/সি রোডে ৪ কোটি টাকা মূল্যের ৩ কাঠার একটা প্লট ও একটা টয়োটা প্রাইভেট কার।

 

ছোট ভাই খাইরুল হাছানের নামে, নরসিংদীর ভেলানগরে ৩ তলা একটি বাড়ী।

 

নরসিংদী জেলার বেলাবো থানাধীন নারায়ণপুর বাজারে খাইরুল বাকের ও তার ছোট ভাই খাইরুল হাসানের নামে রয়েছে আরও ২ টি বাড়ী। তাছাড়া নারায়ণপুর বাজারে বিভিন্ন স্থানে নামে বেনামে শত কোটি টাকার অবৈধ সম্পত্তি জমি কিনে রেখেছে এই দুর্বৃত্ত।

 

৩ কোটি টাকা মূল্যের আলিশান ৩ তলা কমপ্লিট একটা ট্রিপ্লেক্স বাড়ি সহ দেশের বিভিন্ন স্থানে নামে বেনামে বাড়ী- গাড়ী ফ্লাট, প্লট সহ রয়েছে অন্তত ৬০০ কোটি টাকার অবৈধ সম্পত্তি।

 

২০২৫ সালের ১৭-ই ফেব্রুয়ারি তার অপকর্মের একটি অভিযোগ জমা হয় দূর্নীতি দমন কমিশন দুদকের প্রধান কার্যালয়ে।

 

অভিযোগে উল্লেখ করা হয়, সাবেক শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূনের ছত্র-ছায়ায় দুর্নীতির মাধ্যমে নামে বেনামে অবৈধ সম্পদের পাহাড় গড়েছেন এই খাইরুল বাকের।

 

তার এই দূর্নীতির ফিরিস্তি নিয়ে অনুসন্ধানী প্রতিবেদন করতে সাংবাদিকরা খাইরুল বাকেরের গ্ৰামের বাড়ী নারায়ণপুর বাজারে গেলে আওয়ামীলীগের দালাল খাইরুল বাকেরের পূর্ব নির্দেশ অনুযায়ী তার ছোট ভাই খাইরুল হাসানের নেতৃত্বে ১০ জনের একটি সন্ত্রাসী বাহিনী সাংবাদিকদের উপর সন্ত্রাসী হামলা চালায়।

 

পরে তাদের গুরুতর আহত অবস্থায় বেলাবো উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়। তারপর প্রাথমিক চিকিৎসা নেওয়ার পর আওয়ামী ধূসর খাইরুল বাকেরকে প্রধান আসামি ও তার ছোট ভাই খাইরুল হাসান সহ সবুজ কে আসামি করে আরো অজ্ঞাতনামা ৫/৭ জনের বিরুদ্ধে একটি হত্যার চেষ্টা, ক্যামেরা ভাঙচুর এবং চুরির মামলা করা হয়।

 

পরে ঢাকা রেঞ্জের ডিআইজি রেজাউল করিম মল্লিকের নির্দেশক্রমে নরসিংদীর পুলিশ সুপার আব্দুল হান্নান ও বেলাবো থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মীর মাহাবুবের সহযোগিতায় আসামি, রাজিবুল ইসলাম ওরফে রাজিব কে গ্ৰেফতার করে এবং অন্যান্য আসামীদের গ্রেফতারের জন্য জেলার বিভিন্ন স্থানে রাতভর অভিযান পরিচালনা করে।

 

অভিযোগ আছে একাধিক গণমাধ্যম কর্মীকে হুমকি দিয়ে বলেন, নিউজ করে আমার কিছুই করতে পারবেন না আপনাদের যা মনে হয় তাই লিখেন কোন সমস্যা নাই, সিটি কর্পোরেশনের একাধিক কর্মকর্তা-কর্মচারী বলেন বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে তিনি বিএনপিপন্থী কর্মকর্তা কর্মচারীদের তালিকা তৈরি করে মেয়র তাপসের কাছে জমা দিতেন, ঠিকাদারদের কাছে বিপুল পরিমাণ কমিশন নিতেন ভাবতে অবাক লাগে এত বড় একজন দুর্নীতিবাজ ও সাবেক স্বৈরাচারী সরকারের দোসর এত তথ্য প্রমান থাকার পরও তিনি কিভাবে বহাল তবিয়তে আছেন, অভিযোগ আছে পাঁচ ই আগস্ট এর পরে প্রায় কয়েক কোটি টাকা দিয়ে সবাইকে ম্যানেজ করে পুনরায় স্বপদে বহাল আছেন এবং আগের থেকেও তিনি এখন আরও শক্তিশালী ক্ষমতাধর হয়ে গেছেন।

 

একজন খাইরুল বাকের স্বৈরাচারী আওয়ামী লীগ সরকারের দোসর সাবেক প্রভাবশালী ছাত্রলীগ নেতা বৈষম্য বিরোধী গণআন্দোলনে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিভিন্ন পোস্ট কমেন্ট আন্দোলন প্রতিহত করার জন্য বিপুল পরিমাণ অর্থ ব্যয় করে, সাংবাদিককে হত্যার চেষ্টা, দুর্নীতি দমন কমিশন দুদকে একাধিক অভিযোগ পত্র, দেশের শীর্ষ গণমাধ্যমে প্রকাশিত একাধিক প্রতিবেদন, দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের অধিকাংশ কর্মকর্তা-কর্মচারীরা রয়েছে তার বিপক্ষে, তার অনিয়ম দুর্নীতির অভিযোগ তুলে হয়েছে তার বিরুদ্ধে আন্দোলন কিন্তু সব যেন বৃথা কোন এক অদৃশ্য ক্ষমতা বলে এখনো বহাল তবিয়তে আছেন। এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে একাধিকবার খাইরুল বাকের এর কাছে গিয়ে তাকে পাওয়া যায়নি।

খাইরুল বাকেরের ক্ষমতার উৎস ও দুর্নীতির আরো তথ্য নিয়ে আসছে দ্বিতীয় পর্বের অনুসন্ধানী প্রতিবেদন।

 

 

 


নিউজটি আপডেট করেছেন : Banglar Alo News Admin

কমেন্ট বক্স

এ জাতীয় আরো খবর

সর্বশেষ সংবাদ